সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“হে সদাপ্রভু, তুমি . . . আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ”

“হে সদাপ্রভু, তুমি . . . আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ”

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

“হে সদাপ্রভু, তুমি . . . আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ”

“একজন ব্যক্তির পক্ষে সবচাইতে বড়ো বোঝা হল যখন সে উপলব্ধি করে যে, কেউ তার সম্বন্ধে চিন্তা করে না অথবা কেউ তাকে বুঝতে চায় না,” লেখক আর্থার এইচ. স্টেইনব্যাক লিখেছিলেন। আপনি কি এই কথাগুলোর সঙ্গে একমত? আপনার কি কখনো এমনটা মনে হয়েছে যে, কেউ আপনার জন্য চিন্তা করে না অথবা আপনি যে-পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা বুঝতে চায় না। যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনি হয়তো এই কথাগুলোর মধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারেন: যিহোবা তাঁর উপাসকদের জন্য এতটাই গভীরভাবে চিন্তা করেন যে, তাদের দৈনন্দিন জীবনে যাকিছুই ঘটে থাকে, সেই সমস্তই তিনি লক্ষ করেন। গীতসংহিতার ১৩৯ গীতে দায়ূদের কথাগুলো এই সত্যটা সম্বন্ধে আমাদেরকে আশ্বাস দেয়।

তার প্রতি ঈশ্বরের আগ্রহের বিষয়ে প্রত্যয়ী হয়ে দায়ূদ বলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে অনুসন্ধান করিয়াছ, আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ।” (পদ ১) দায়ূদ এখানে একটি সুন্দর শব্দচিত্র ব্যবহার করেন। যে-ইব্রীয় ক্রিয়াপদটিকে “অনুসন্ধান কর” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা আকরিকের জন্য খনন করা (ইয়োব ২৮:৩), কোন দেশ নিরীক্ষণ করা (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৮:২) অথবা কোনো মামলার বিভিন্ন তথ্য পরীক্ষা করাকে (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:১৪) বোঝাতে পারে। হ্যাঁ, যিহোবা আমাদেরকে এতটাই ভালোভাবে জানেন যে, তিনি যেন আমাদের অস্তিত্বের প্রত্যেকটা দিক ও প্রত্যেকটা বিষয়কে পরীক্ষা করেছেন। “আমাকে” সর্বনাম পদটি ব্যবহার করার দ্বারা দায়ূদ আমাদের এই শিক্ষা দেন যে, তাঁর দাসদের প্রতি ঈশ্বরের ব্যক্তিগত আগ্রহ রয়েছে। তিনি তাদের অনুসন্ধান করেন এবং ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে তাদেরকে জানেন।

এই কথাগুলো বলার দ্বারা দায়ূদ ঈশ্বর কতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করেন সেটাকে তুলে ধরেন: “তুমিই আমার উপবেশন ও আমার উত্থান জানিতেছ, তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ।” (পদ ২) এক অর্থে যিহোবা ‘দূরে’ থাকেন যেহেতু তিনি স্বর্গে বাস করেন। তবুও তিনি জানেন যে, সম্ভবত এক দীর্ঘ দিনের শেষে আমরা কখন বসি আর সকালবেলায় কখন উঠি এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন শুরু করি। এ ছাড়া, তিনি আমাদের চিন্তাভাবনা, আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্দেশ্যগুলোও জানেন। এই ধরনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার কারণে দায়ূদ কি ভয় পেয়েছিলেন? এর বিপরীতে, তিনি এটাকে আমন্ত্রণ জানান। (পদ ২৩, ২৪) কেন?

দায়ূদ জানেন যে, তাঁর উপাসকদের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করার পিছনে যিহোবার এক ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এই কথাগুলো লেখার দ্বারা দায়ূদ সেই মনোভাবের ইঙ্গিত দেন: “তুমি আমার পথ ও আমার শয়ন তদন্ত করিতেছ, আমার সমস্ত পথ ভালরূপে জান।” (পদ ৩) প্রত্যেক দিন যিহোবা ‘আমাদের সমস্ত পথ’—আমাদের ভুলভ্রান্তি ও সেইসঙ্গে আমাদের ভালো কাজগুলো—দেখেন। তিনি কি খারাপ বিষয়গুলোর ওপর নাকি ভালো বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন? যে-ইব্রীয় শব্দটিকে “তদন্ত করা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে সেটি “শোধন” করা অথবা “তুষ ঝাড়া”-কে বোঝাতে পারে, অনেকটা কৃষক যেভাবে ভালো শস্য পাওয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় তুষ ঝেড়ে বের করে দেন। “ভালরূপে জান” বাক্যাংশটিকে যে-ইব্রীয় শব্দ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে সেটি “মূল্যবান হিসেবে গণ্য করা”-কে বোঝাতে পারে। প্রত্যেকদিন তাঁর উপাসকরা যা যা বলে ও করে তা পরীক্ষা করার সময় যিহোবা ভালো বিষয়গুলোকে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেন। কেন? কারণ তাঁকে খুশি করার প্রচেষ্টাগুলোকে তিনি মূল্য দেন।

গীতসংহিতার ১৩৯ গীত আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সময় তিনি তাদের অনুসন্ধান করেন এবং তাদের ওপর লক্ষ রাখেন। ফলে তারা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় তিনি সেগুলো জানেন আর এই সমস্যাগুলোর কারণে হয়তো তারা হৃদয়ে যে-ব্যথা পায়, সেটা তিনি বোঝেন। আপনি কি এই ধরনের একজন চিন্তাশীল ঈশ্বরকে উপাসনা করতে অনুপ্রাণিত হন? যদি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন: যিহোবা কখনোই ‘আপনার কার্য্য, এবং তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত আপনার প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।’—ইব্রীয় ৬:১০. (w১১-E ০৯/০১)