যিহোশূয়ের পুস্তক ৬:১-২৭

 ইজরায়েলীয়দের কারণে যিরীহো নগরের দরজাগুলো খুব শক্ত করে বন্ধ করে রাখা হল। কেউই নগরের বাইরে যেতে কিংবা নগরের ভিতরে আসতে পারছিল না। ২  তখন যিহোবা যিহোশূয়কে বললেন: “দেখো, আমি যিরীহো নগর ও সেইসঙ্গে এর রাজা এবং বীরযোদ্ধাদের তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। ৩  তুমি তোমার সমস্ত সৈন্যকে নিয়ে নগরের চারপাশে ঘুরবে। প্রতিদিন তোমরা এক বার করে নগরের চারপাশে ঘুরবে আর ছয় দিন ধরে তোমরা এমনটা করবে। ৪  সাত জন যাজককে বলবে, যেন তারা হাতে একটা করে শিঙা* নিয়ে সিন্দুকের আগে আগে যায়। কিন্তু, সপ্তম দিনে তোমরা সাত বার নগরের চারপাশে ঘুরবে আর যাজকেরা শিঙা বাজাবে। ৫  সপ্তম বার ঘোরা শেষ হওয়ার পর যেই-না তোমরা শিঙার আওয়াজ শুনবে,* অমনি তুমি সমস্ত লোকের সঙ্গে উচ্চস্বরে যুদ্ধের ঘোষণা করবে। তখন যিরীহো নগরের প্রাচীর পড়ে যাবে আর তোমরা সোজা নগরে ঢুকে আক্রমণ করবে।” ৬  তখন নূনের ছেলে যিহোশূয় যাজকদের ডেকে বললেন: “তোমরা চুক্তির সিন্দুক ওঠাবে আর সাত জন যাজক হাতে একটা করে শিঙা নিয়ে যিহোবার সিন্দুকের আগে আগে যাবে।” ৭  যিহোশূয় লোকদের বললেন: “তোমাদের এগিয়ে গিয়ে নগরের চারপাশে ঘুরতে হবে। সশস্ত্র সৈনিকেরা যিহোবার সিন্দুকের আগে আগে থাকবে।” ৮  যিহোশূয় যেমনটা বললেন, তারা ঠিক তেমনটাই করল। সাত জন যাজক হাতে একটা করে শিঙা নিয়ে যিহোবার আগে আগে গেল আর শিঙা বাজাল। যিহোবার চুক্তির সিন্দুক তাদের পিছনেই ছিল। ৯  যে-যাজকেরা শিঙা বাজাচ্ছিল, তাদের আগে আগে সশস্ত্র সৈনিকেরা যাচ্ছিল আর সিন্দুকের পিছনেও সৈন্যদের একটা দল যাচ্ছিল আর যাজকেরা শিঙা বাজিয়ে যাচ্ছিল। ১০  যিহোশূয় লোকদের আজ্ঞা দিলেন: “তোমরা চিৎকার করবে না। তোমাদের মুখ থেকে যেন একটাও শব্দ বের না হয়। যতক্ষণ না আমি বলছি, ততক্ষণ তোমরা চুপ করে থাকবে। যে-দিন আমি বলব, ‘চিৎকার করো!’ সেই দিন তোমরা চিৎকার করবে।” ১১  যিহোশূয়ের কথামতো যিহোবার সিন্দুক নিয়ে নগরের চারপাশে ঘোরা হল। লোকেরা নগরের চারপাশে এক বার ঘোরার পর শিবিরে ফিরে এল আর রাতে সেখানেই থাকল। ১২  পরের দিন যিহোশূয় সকাল সকাল উঠলেন আর যাজকেরা যিহোবার সিন্দুক ওঠাল। ১৩  আর সাত জন যাজক নিজের শিঙা বাজাতে বাজাতে যিহোবার সিন্দুকের আগে আগে যেতে লাগল। তাদের আগে আগে সশস্ত্র সৈনিকেরা যাচ্ছিল আর যিহোবার সিন্দুকের পিছনেও সৈন্যদের একটা দল যাচ্ছিল আর যাজকেরা শিঙা বাজিয়ে যাচ্ছিল। ১৪  দ্বিতীয় দিনও তারা নগরের চারপাশে এক বার ঘুরল আর তারপর শিবিরে ফিরে এল। ছয় দিন ধরে তারা এমনটাই করল। ১৫  সপ্তম দিন ভোর হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে তারা উঠল আর প্রতিদিনের মতোই নগরের চারপাশে ঘুরল। কিন্তু, এই দিন তারা সাত বার নগরের চারপাশে ঘুরল। ১৬  সপ্তম বার ঘোরা শেষ হওয়ার পরই যাজকেরা শিঙা বাজাল আর যিহোশূয় লোকদের বললেন: “চিৎকার করো! যিহোবা এই নগর তোমাদের দিয়ে দিয়েছেন। ১৭  এই নগর এবং এতে যা-কিছু রয়েছে, সেগুলোর উপর যিহোবার অধিকার রয়েছে আর তিনি এগুলোকে ধ্বংসের যোগ্য বলে নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু, বেশ্যা রাহব এবং তার সঙ্গে যারা তার বাড়িতে রয়েছে, তাদের জীবিত রাখবে কারণ রাহব আমাদের গুপ্তচরদের লুকিয়ে রেখেছিল। ১৮  কিন্তু, যে-বিষয়গুলোকে ধ্বংসের যোগ্য বলে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো থেকে তোমরা দূরে থাকবে, যাতে তোমরা সেইরকম কোনো কিছুর লোভে না পড় আর সেটা নিয়ে না নাও। তোমরা যদি এমনটা কর, তা হলে ইজরায়েলের শিবিরকে ধ্বংসের যোগ্য বলে নির্ধারণ করা হবে আর আমাদের উপর বিপদ* এসে পড়বে। ১৯  কিন্তু, সমস্ত সোনা-রুপো ও সেইসঙ্গে তামা ও লোহা দিয়ে তৈরি জিনিসগুলো যিহোবার কোষাগারে দিয়ে দেবে। এই জিনিসগুলো যিহোবার দৃষ্টিতে পবিত্র।” ২০  যখন শিঙা বাজানো হল, তখন লোকেরা জোরে চিৎকার করল। শিঙার আওয়াজ শোনামাত্রই তারা উচ্চস্বরে যুদ্ধের ঘোষণা করল আর তখনই যিরীহো নগরের প্রাচীর পড়ে গেল। তারা সোজা নগরে ঢুকে গেল আর সেটাকে দখল করে নিল। ২১  তারা বাচ্চা, বুড়ো, পুরুষ, মহিলা, ষাঁড়, মেষ ও গাধা, সবাইকে তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলল। ২২  যে-দুই জন গুপ্তচর দেশের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিল, তাদের যিহোশূয় বললেন: “সেই বেশ্যার বাড়িতে যাও আর তাকে এবং তার পরিবারের সবাইকে নিরাপদে বের করে আনো, ঠিক যেমনটা তোমরা তার কাছে দিব্য করেছিলে।” ২৩  এতে সেই দুই যুবক রাহবের বাড়িতে গেল আর রাহবকে, তার বাবা-মাকে, তার ভাইদের এবং তার সঙ্গে থাকা সমস্ত ব্যক্তিকে, হ্যাঁ, তার পুরো পরিবারকে বের করে আনল। তারা তাদের নিরাপদে ইজরায়েলের শিবিরের বাইরে একটা সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে গেল। ২৪  তারপর, তারা যিরীহো নগর এবং তাতে থাকা সমস্ত কিছু আগুনে পুড়িয়ে দিল। কিন্তু, সোনা-রুপো ও সেইসঙ্গে তামা ও লোহার জিনিসগুলো তারা যিহোবার কোষাগারে দিয়ে দিল। ২৫  আর যিহোশূয় কেবল বেশ্যা রাহব, তার বাবার পরিবার এবং রাহবের সঙ্গে থাকা সবাইকে জীবিত রাখল। রাহব আজও ইজরায়েলে বাস করে কারণ সে সেই পুরুষদের লুকিয়ে রেখেছিল, যাদের যিহোশূয় যিরীহো নগরের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিল। ২৬  সেই সময় যিহোশূয় এই দিব্য করলেন:* “যে-ব্যক্তি যিরীহো নগর পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা করবে, তার উপর যিহোবার অভিশাপ আসবে। এরজন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। সে যদি এই নগরের ভিত্তি স্থাপন করে, তা হলে তার প্রথমজাত ছেলে মারা যাবে আর সে যদি নগরের দরজা লাগায়, তা হলে তার সবচেয়ে ছোটো ছেলে মারা যাবে।” ২৭  এভাবে যিহোবা যিহোশূয়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকলেন আর পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ল।

পাদটীকাগুলো

আক্ষ., “মেষের শিং।”
বা “তোমরা একটানা শিঙা বাজতে শুনবে।”
বা “সমস্যা।”
বা সম্ভবত, “লোকদের দিয়ে এই দিব্য করালেন।”