সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারেন!

আপনি শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারেন!

“তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া [শয়তানের] প্রতিরোধ কর।” —১ পিতর ৫:৯.

১. (ক) কেন এখন শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কীভাবে আমরা জানি, শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা জয়ী হতে পারি?

শয়তান পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং ‘আরও মেষের’ বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। (যোহন ১০:১৬) দিয়াবলের হাতে অল্পসময় বাকি আছে আর এই সময়ের মধ্যে সে যত বেশিসংখ্যক যিহোবার দাসদের বিশ্বাস নষ্ট করতে চায়। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২.) কিন্তু, আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি। বাইবেল বলে: “দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।”—যাকোব ৪:৭.

২, ৩. (ক) কেন শয়তান চায় যেন লোকেরা মনে করে তার অস্তিত্ব নেই? (খ) কীভাবে আমরা জানি, শয়তান হল বাস্তব ব্যক্তি?

শয়তানের অস্তিত্ব রয়েছে, এই ধারণা কেউ কেউ হেসে উড়িয়ে দেয়। তাদের কাছে শয়তান ও তার মন্দদূতেরা হল এমন চরিত্র, যাদের কেবল গল্প বইয়ে, ভৌতিক সিনেমায় ও ভিডিও গেমসে পাওয়া যায়। এই ধরনের ব্যক্তিরা মনে করে, আপনি যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি মন্দ আত্মাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করবেন না। লোকেরা যে শয়তান ও তার মন্দদূতদের বাস্তব বলে মনে করে না, তাতে কি শয়তানের কিছু যায়-আসে? না। যারা শয়তানের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে তাদেরকে প্রতারণা করা তার পক্ষে আরও সহজ হয়। (২ করি. ৪:৪) আসলে শয়তান এইরকম ধারণাগুলো ছড়িয়ে দেয়, যাতে সে লোকেদের ভ্রান্ত করতে পারে।

আমরা যেহেতু যিহোবার দাস, তাই আমরা ভ্রান্ত হই না। আমরা জানি, শয়তান হল একজন বাস্তব ব্যক্তি। কীভাবে আমরা তা জানি? বাইবেল আমাদের বলে, শয়তান একটা সর্পের মাধ্যমে হবার সঙ্গে কথা বলেছিল। (আদি. ৩:১-৫) এ ছাড়া, সে ইয়োবের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করে যিহোবার সঙ্গে কথা বলেছিল। (ইয়োব ১:৯-১২) শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল। (মথি ৪:১-১০) আর যিশু ১৯১৪ সালে রাজা হওয়ার পর, শয়তান পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে “যুদ্ধ” করতে শুরু করেছিল। (প্রকা. ১২:১৭) এই যুদ্ধ এখনও চলছে কারণ দিয়াবল অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং আরও মেষের বিশ্বাস নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই, এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে এবং আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখতে হবে। এই প্রবন্ধে তা করার তিনটে উপায় আলোচনা করা হবে।

অহংকার প্রত্যাখ্যান করুন

৪. কীভাবে শয়তান দেখিয়েছে, সে হল অহংকারী মনোভাবের উপযুক্ত উদাহরণ?

শয়তান হল অত্যন্ত অহংকারী। এই দুষ্ট স্বর্গদূত ঈশ্বরের শাসন করার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছিল এবং অন্যেরা যেন যিহোবার পরিবর্তে তার উপাসনা করে এমন চেষ্টা করেছিল। এই কারণে, সে হল অহংকার ও উদ্ধত মনোভাবের উপযুক্ত উদাহরণ। তাই, আমরা অহংকার প্রত্যাখ্যান করার এবং নম্র হওয়ার মাধ্যমে শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৫.) কিন্তু অহংকার বলতে কী বোঝায়? অহংকার করা কি সবসময়ই খারাপ?

৫, ৬. (ক) অহংকার করা কি সবসময়ই খারাপ? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কোন ধরনের অহংকার বিপদজনক আর বাইবেলে এইরকম অহংকারের কোন উদাহরণগুলো রয়েছে?

একটা অভিধান অনুসারে, অহংকার বা গর্ব হল আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মানের এক অনুভূতি। এ ছাড়া, এটা হচ্ছে “পরিতৃপ্তির এক অনুভূতি, যা আপনি সেইসময়ে অনুভব করেন, যখন আপনি অথবা আপনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ভালো কোনো কাজ করেন অথবা উত্তম কিছু লাভ করেন।” এইরকম অনুভব করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। প্রেরিত পৌল থিষলনীকীর ভাই-বোনদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “তোমরা যে সকল তাড়না ও ক্লেশ সহ্য করিতেছ, সেই সকলের মধ্যে তোমাদের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস থাকায় আমরা আপনারা ঈশ্বরের মণ্ডলী সকলের মধ্যে তোমাদের শ্লাঘা করিতেছি।” (২ থিষল. ১:৪) তাই, অন্যদের কাজ নিয়ে আনন্দ অনুভব করা আর এমনকী নিজেদের সম্বন্ধে কিছুটা শ্লাঘা বা গর্ব থাকা আমাদের জন্য উপকারজনক হতে পারে। আমাদের পরিবার, আমাদের সংস্কৃতি অথবা যে-জায়গায় আমরা বড়ো হয়েছি, সেই জায়গার বিষয়ে আমাদের লজ্জিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।—প্রেরিত ২১:৩৯.

কিন্তু, আরেক ধরনের অহংকার রয়েছে, যা বিভিন্ন সম্পর্ক, বিশেষভাবে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিতে পারে। এই ধরনের অহংকার থাকলে, আমাদের যখন পরামর্শ দেওয়া হবে, তখন আমরা বিরক্ত হতে পারি। এমনকী এইরকম অহংকারের কারণে আমরা নম্র হয়ে পরামর্শ মেনে নেওয়ার পরিবর্তে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারি। (গীত. ১৪১:৫) এই ধরনের অহংকারকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, নিজেদের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা অথবা “সেই লোকেদের দেখানো গর্বিত মনোভাব, যারা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে আর তাদের এই চিন্তাভাবনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক।” যিহোবা উদ্ধত অহংকার ঘৃণা করেন। (যিহি. ৩৩:২৮; আমোষ ৬:৮) তবে, মানুষ যখন নিজের বিষয়ে বড়াই করার মাধ্যমে শয়তানের উদ্ধত মনোভাব অনুকরণ করে, তখন শয়তান খুশি হয়। কল্পনা করে দেখুন, শয়তান সেইসময়ে কতই-না খুশি হয়েছিল, যখন নিম্রোদ, ফরৌণ ও অবশালোম বড়াই করার মাধ্যমে অনুপযুক্ত অহংকার দেখিয়েছিলেন! (আদি. ১০:৮, ৯; যাত্রা. ৫:১, ২; ২ শমূ. ১৫:৪-৬) কয়িন যে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট করেছিলেন, সেটার পিছনে একটা কারণ ছিল তার অহংকার। স্বয়ং যিহোবা কয়িনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু কয়িন এতটাই অহংকারী ছিলেন যে, তিনি তা শোনেননি। তিনি একগুঁয়ে ছিলেন, ঈশ্বরের সাবধানবাণী উপেক্ষা করেছিলেন এবং যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করতে দ্বিধা করেননি।—আদি. ৪:৬-৮.

৭, ৮. (ক) জাতিগত বৈষম্য বলতে কী বোঝায় আর কীভাবে তা অহংকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? (খ) অহংকার কীভাবে মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন।

বর্তমানে, লোকেরা এমন উপায়ে অহংকার প্রকাশ করে, যা অনেক ক্ষতি নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে অহংকার জাতিগত বৈষম্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটা অভিধান অনুসারে, জাতিগত বৈষম্য হল অন্য জাতির লোকেদের সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা। এ ছাড়া, এটা হল “এইরকম বিশ্বাস করা, ভিন্ন ভিন্ন জাতির ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলি ও যোগ্যতা রয়েছে আর কোনো কোনো জাতি সহজাতভাবেই অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অথবা নগণ্য।” জাতিগত বৈষম্যের কারণে লড়াই, যুদ্ধ এমনকী গণহত্যার সূত্রপাত হয়েছে।

নিশ্চিতভাবেই, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এই ধরনের মনোভাব থাকবে না। তা সত্ত্বেও, অহংকারের কারণে ভাই-বোনদের মধ্যে হয়তো মতের অমিল দেখা দিতে পারে আর তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে কারো কারো ক্ষেত্রে তা ঘটেছিল আর তাই যাকোব তাদেরকে এই জোরালো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কোথা হইতে যুদ্ধ ও কোথা হইতে বিবাদ উৎপন্ন হয়?” (যাকোব ৪:১) আমরা যদি অন্যদের সম্বন্ধে ঘৃণাপোষণ করি এবং মনে করি, আমরা তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তাহলে আমরা হয়তো এমন কিছু বলে ফেলতে অথবা করে ফেলতে পারি, যা সত্যিকার অর্থেই তাদের আঘাত দেবে। (হিতো. ১২:১৮) স্পষ্টতই, অহংকার মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট করতে পারে।

৯. কীভাবে বাইবেল আমাদের জাতিগত বৈষম্য এবং অন্যান্য ধরনের অনুপযুক্ত অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আমাদের যদি নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করার প্রবণতা থাকে, তাহলে আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ঘৃণা করেন, “যে কেহ হৃদয়ে গর্ব্বিত।” (হিতো. ১৬:৫) এ ছাড়া, আমাদের নিজেদের হৃদয় পরীক্ষা করতে হবে এবং নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘আমি কি এমনটা মনে করি, আমি অন্য জাতির, অন্য দেশের অথবা অন্য সংস্কৃতির লোকেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ?’ যদি তা-ই হয়, তাহলে আমরা আসলে ভুলে যাচ্ছি, ঈশ্বর “এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৬) এক অর্থে, আমরা সবাই এক জাতি কারণ আমরা প্রত্যেকে আদমের কাছ থেকে এসেছি। তাই, ঈশ্বর কোনো কোনো জাতিকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, এইরকম মনে করা বিরাট বোকামি হবে। আমরা যদি অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি, তাহলে আমরা শয়তানকে আমাদের খ্রিস্টীয় প্রেম ও একতা নষ্ট করার সুযোগ দিচ্ছি। (যোহন ১৩:৩৫) শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার জন্য আমাদের সমস্ত ধরনের অনুপযুক্ত অহংকার এড়িয়ে চলতে হবে।—হিতো. ১৬:১৮.

বস্তুবাদিতা এবং জগতের প্রতি ভালোবাসা এড়িয়ে চলুন

১০, ১১. (ক) কেন আমরা সহজেই জগতের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে পারি? (খ) জগতের প্রতি দীমার ভালোবাসা তার জন্য কী ফল নিয়ে এসেছিল?

১০ শয়তান হল “এ জগতের অধিপতি” আর সে এই জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছে। (যোহন ১২:৩১; ১ যোহন ৫:১৯) এই জগৎ যে-সমস্ত বিষয় ছড়িয়ে দেয়, সেগুলোর মধ্যে অনেক বিষয় বাইবেলের মানের বিরুদ্ধে। অবশ্য, জগতের সমস্ত বিষয়ই যে মন্দ, তা নয়। কিন্তু আমরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারি, শয়তান আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য তার জগৎকে ব্যবহার করবে এবং আমাদের দিয়ে পাপ করানোর চেষ্টা করবে। অথবা সে এমন চেষ্টা চালিয়ে যাবে, যেন আমরা জগৎকে ভালোবাসি এবং যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনাকে উপেক্ষা করি।—পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫, ১৬.

১১ প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে কেউ কেউ জগৎকে ভালোবেসেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পৌল লিখেছিলেন, “দীমা এই বর্ত্তমান যুগ ভালবাসাতে আমাকে ত্যাগ করিয়াছে।” (২ তীম. ৪:১০) দীমা জগতের ঠিক কোন অংশ ভালোবেসে পৌলকে ত্যাগ করেছিলেন, সেই বিষয়ে বাইবেল আমাদের জানায় না। তবে হতে পারে, দীমা যিহোবার প্রতি তার সেবার চেয়ে বস্তুগত বিষয়গুলোকে বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন। যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে দীমা ঈশ্বরের সেবা করার রোমাঞ্চকর বিশেষ সুযোগ হারিয়েছিলেন। এর ফলে তিনি কি উত্তম কিছু লাভ করতে পেরেছিলেন? না। দীমা যদি জগৎকে ভালো না বাসতেন, তাহলে তিনি পৌলের সহকারী হিসেবেই থাকতে পারতেন। যিহোবা তাকে যা দিতেন, তার চেয়ে উত্তম কিছু এই জগৎ তাকে দিতে পারত না।—হিতো. ১০:২২.

১২. কীভাবে শয়তান “ধনের মায়া” ব্যবহার করে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে?

১২ বর্তমানে আমাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটতে পারে। খ্রিস্টান হিসেবে, নিজেদের এবং পরিবারের জন্য ভরণ-পোষণ জোগানোর আকাঙ্ক্ষা থাকা স্বাভাবিক বিষয়। (১ তীম. ৫:৮) যিহোবা চান যেন আমরা জীবন উপভোগ করি। আমরা তা বুঝতে পারি কারণ তিনি আদম ও হবাকে এক সুন্দর পরমদেশে থাকতে দিয়েছিলেন। (আদি. ২:৯) কিন্তু, “ধনের মায়া” ব্যবহার করে শয়তান আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে। (মথি ১৩:২২) অনেকে মনে করে, টাকাপয়সা এবং বস্তুগত সম্পদ তাদের সুখী বা সফল হতে সাহায্য করবে। আমরা যদি সেভাবে চিন্তা করি, তাহলে আমরা নিজেদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্থাৎ যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হারিয়ে ফেলতে পারি। যিশু সাবধান করেছিলেন: “কেহই দুই কর্ত্ত্যার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” (মথি ৬:২৪) আমরা যদি কেবল বস্তুগত সম্পদের দাস হয়ে থাকি, তাহলে আমরা আসলে যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছি। শয়তান আমাদের দিয়ে ঠিক এটাই করাতে চায়। তাই, আমরা যেন কখনো টাকাপয়সা অথবা টাকা দিয়ে কেনা যায় এমন বিষয়গুলোকে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে না দিই। শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার জন্য বস্তুগত বিষয়ের প্রতি আমাদের সঠিক মনোভাব থাকতে হবে।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৬-১০.

যৌন অনৈতিকতা প্রতিরোধ করুন

১৩. কীভাবে এই জগৎ বিয়ে ও যৌনতা সম্বন্ধে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দিয়েছে?

১৩ শয়তানের আরেকটা ফাঁদ হচ্ছে যৌন অনৈতিকতা। অনেকে মনে করে, স্বামী অথবা স্ত্রীর প্রতি আর সেইসঙ্গে বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার বিষয়টা সেকেলে ধারণা এবং এটা তাদের স্বাধীনতাকে হ্রাস করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন অভিনেত্রী বলেছিলেন, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা অসম্ভব। তিনি এটাও বলেছিলেন, “আমি এমন কাউকে চিনি না, যিনি বিশ্বস্ত কিংবা বিশ্বস্ত থাকতে চান।” একজন অভিনেতা বলেছিলেন, “একজন ব্যক্তির সঙ্গে বাকি জীবন কাটানোর ইচ্ছা সত্যিই আমাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য কি না, সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।” বিখ্যাত ব্যক্তিরা যখন ঈশ্বরদত্ত বিয়ের দান সম্বন্ধে সমালোচনা করে, তখন শয়তান নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়। দিয়াবল বিয়ের ব্যবস্থাকে সমর্থন করে না আর মানুষের বিয়ে সফল হোক, এটাও সে চায় না। তাই, শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার জন্য বিয়ের বিষয়ে আমাদের ঈশ্বরের মতো দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে।

১৪, ১৫. আপনি যদি যৌন অনৈতিকতায় রত হওয়ার জন্য প্রলোভিত হন, তাহলে আপনি কী করতে পারেন?

১৪ আমরা বিবাহিত হই কিংবা অবিবাহিত হই, সমস্ত ধরনের যৌন অনৈতিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তা করা কি সহজ? না! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তাহলে তুমি হয়তো শুনতে পাও, তোমার সহছাত্র-ছাত্রীরা বড়াই করে বলছে, তারা যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে পারে। এ ছাড়া, তারা হয়তো সেক্সটিং বা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যৌন উদ্দীপনামূলক মেসেজ ও ছবি পাঠানোর বিষয়ে বড়াই করে কথা বলতে পারে। কোনো কোনো দেশের আইন অনুযায়ী, সেক্সটিং এবং কারো কাছে শিশু পর্নোগ্রাফি পাঠানো একই বিষয়। বাইবেল বলে: “যে ব্যভিচার” বা যৌন অনৈতিকতা “করে, সে নিজ দেহের বিরুদ্ধে পাপ করে।” (১ করি. ৬:১৮) যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগের কারণে অনেক কষ্ট ও মৃত্যু ঘটে থাকে। আর বিয়ে না করেই যৌন সম্পর্ক করেছে এমন অধিকাংশ অল্পবয়সি পরে তাদের কাজের জন্য আপশোস করেছে। বিনোদন জগৎ চায় যেন আমরা এমনটা বিশ্বাস করি, ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করলে কোনো খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে না। আমরা যদি এইরকম মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করি, তাহলে আমরা ‘পাপের প্রতারণা’ দ্বারা ভ্রান্ত হতে পারি।—ইব্রীয় ৩:১৩.

১৫ আপনি যদি যৌন অনৈতিকতায় রত হওয়ার জন্য প্রলোভিত হন, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? নিজের দুর্বলতা স্বীকার করুন। (রোমীয় ৭:২২, ২৩) ঈশ্বরের কাছে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করুন। (ফিলি. ৪:৬, ৭, ১৩) অনৈতিকতায় রত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে পারে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন। (হিতো. ২২:৩) আর প্রলোভন আসলে তা সঙ্গেসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করুন।—আদি. ৩৯:১২.

১৬. শয়তান যখন যিশুকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল, তখন যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন আর সেই উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৬ যিশু আমাদের জন্য এক জোরালো উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। তিনি শয়তানের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির দ্বারা প্রতারিত হননি। তিনি এমনকী সেইসমস্ত বিষয়ে চিন্তা করার জন্য কোনো সময়ও নেননি। এর পরিবর্তে, তিনি সঙ্গেসঙ্গে শয়তানকে বলেছিলেন: “লেখা আছে।” (পড়ুন, মথি ৪:৪-১০.) যিশু ঈশ্বরের বাক্য জানতেন আর তাই শয়তান যখন তাঁকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে শাস্ত্রপদ থেকে উদ্ধৃতি করতে পেরেছিলেন। শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার জন্য আমাদের যৌন অনৈতিকতার প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করা এড়িয়ে চলতে হবে।—১ করি. ৬:৯, ১০.

ধৈর্য বজায় রাখার মাধ্যমে লড়াইয়ে জয়ী হোন

১৭, ১৮. (ক) শয়তান আর কোন কোন ফাঁদ ব্যবহার করে এবং আমরা কী জানি? (খ) শয়তানকে কী করা হবে আর এই বিষয়টা কীভাবে আমাদের ধৈর্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে?

১৭ অহংকার, বস্তুবাদিতা ও যৌন অনৈতিকতা হচ্ছে কেবল তিনটে ফাঁদ, যেগুলো শয়তান ব্যবহার করে। এগুলো ছাড়াও অনেক ফাঁদ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো কোনো খ্রিস্টান তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিরোধিতার শিকার হন। অথবা সহছাত্র-ছাত্রীরা তাদের উপহাস করে। অন্যেরা এমন দেশে বাস করে, যেখানে তাদের সরকার প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা জানি, এইরকম সমস্যা আসবেই। যিশু নিজে আমাদের সাবধান করেছিলেন: “আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে; কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—মথি ১০:২২.

শয়তানকে ধ্বংস করা হবে (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮ কীভাবে আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারি? যিশু বলেছিলেন: “তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে।” (লূক ২১:১৯) কোনো মানুষই আমাদের চিরস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে না। আর আমরা যদি সুযোগ না দিই, তাহলে কোনো মানুষই ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে নষ্ট করতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের মধ্যে কেউ কেউ যদি মারাও যায়, তার অর্থ এই নয়, শয়তান জয়ী হয়েছে। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করবেন। (যোহন ৫:২৮, ২৯) কিন্তু, শয়তানের কোনো ভবিষ্যৎ আশা নেই। এই দুষ্ট জগৎ ধ্বংস করার পর, তাকে ১,০০০ বছরের জন্য অগাধলোকে নিক্ষেপ করা হবে। (প্রকা. ২০:১-৩) খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে, শয়তানকে “তাহার কারা হইতে মুক্ত করা” হবে আর সে সিদ্ধ মানবজাতিকে শেষ বারের মতো ভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তারপর, তাকে ধ্বংস করা হবে। (প্রকা. ২০:৭-১০) যদিও দিয়াবলের কোনো ভবিষ্যৎ আশা নেই, কিন্তু আপনার আশা আছে! ক্রমাগত শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করুন এবং আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করুন। আপনি শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারেন!