সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন অসুস্থ বন্ধুকে যেভাবে সাহায্য করা যায়

একজন অসুস্থ বন্ধুকে যেভাবে সাহায্য করা যায়

একজন অসুস্থ বন্ধুকে যেভাবে সাহায্য করা যায়

গুরুতরভাবে অসুস্থ একজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় আপনার কি কখনো মনে হয়েছে যে, আপনি কী বলবেন তা আপনি জানেন না? আপনি আশ্বাস রাখতে পারেন যে, আপনি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কাটিয়ে উঠতে পারেন। কীভাবে? এর জন্য কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ম নেই। সংস্কৃতিগত পার্থক্যগুলো জড়িত থাকতে পারে। এ ছাড়া, লোকেদের ব্যক্তিত্বেও বিরাট পার্থক্য থাকতে পারে। তাই, যে-বিষয়টা একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে ভালো বোধ করাতে পারে, সেটা হয়তো অন্যজনের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী না-ও হতে পারে। আর পরিস্থিতি ও অনুভূতিও হয়তো একদিনের চেয়ে অন্য দিনে ভিন্ন হতে পারে।

তাই, আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি যেন নিজেকে সেই ব্যক্তির জায়গায় রাখার চেষ্টা করেন এবং জানেন যে, তিনি আপনার কাছ থেকে প্রকৃতই কী চান এবং তার কী প্রয়োজন আছে? কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? বাইবেলের নীতির ওপর ভিত্তি করে এখানে কয়েকটা পরামর্শ দেওয়া হল।

উত্তম শ্রোতা হোন

বাইবেলের নীতিগুলো:

“তোমাদের প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর . . . হউক।”যাকোব ১:১৯.

‘নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল আছে।’উপদেশক ৩:১, ৭.

◼ একজন অসুস্থ বন্ধুকে যখন দেখতে যান, তখন মন দিয়ে ও সহানুভূতির সঙ্গে তার কথা শুনুন। পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না অথবা এমনটা মনে করবেন না যে, আপনাকে সবসময় কোনো না কোনো সমাধান বের করতেই হবে। তাড়াহুড়ো করে কিছু বলার সময়, আপনি হয়তো নিজের অজান্তে এমন কিছু বলে ফেলতে পারেন, যা সেই ব্যক্তিকে আঘাত করতে পারে। আপনার অসুস্থ বন্ধু যে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন এমন নয়, বরং এমন কাউকে খোঁজার চেষ্টা করছেন যিনি খোলা মনে তার কথা শুনবেন।

আপনার বন্ধুকে খোলাখুলিভাবে তার মনের কথা বলতে দিন। তার কথায় বাধা দেবেন না, তুচ্ছ কথাবার্তা বলে তার অবস্থাকে হালকা করে দেখবেন না। “আমার ফাংগাস ঘটিত মেনিনজাইটিস হয়েছিল আর এর ফলে আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল,” অজয় বলেন। * “কখনো কখনো আমি সত্যিই হতাশা বোধ করি আর তাই বন্ধুরা আমাকে এই বলে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে: ‘তোমার একারই যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা নয়। এমন লোকেরাও রয়েছে যাদের অবস্থা আরও খারাপ।’ কিন্তু, যে-বিষয়টা তারা উপলব্ধি করে না সেটা হল যে, আমার অবস্থাকে হালকা করে দেখা কোনোভাবেই আমাকে সাহায্য করে না। এর বিপরীতে, এটা আমার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে, যা আমাকে হতাশ করে তুলেছে।”

সমালোচিত হওয়ার ভয় নেই এই আশ্বাস দিয়ে আপনার বন্ধুকে খোলাখুলিভাবে মনের কথা বলতে দিন। তিনি যদি আপনাকে বলেন যে, তিনি ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তাকে শুধুমাত্র ভয় না পেতে বলার পরিবর্তে, তার আবেগ-অনুভূতিকে স্বীকার করুন। “আমি যখন আমার অবস্থা সম্বন্ধে উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকি ও কান্নায় ভেঙে পড়ি, তখন তার মানে এই নয় যে, ঈশ্বরের ওপর আমি নির্ভর করি না,” সঞ্চিতা বলেন, যিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন। আপনি আপনার বন্ধুকে যেভাবে দেখতে চান সেইভাবে নয়, বরং তিনি যেভাবে রয়েছেন সেইভাবে দেখার জন্য চেষ্টা করুন। মনে রাখুন যে, আপনি যা বলেন তাতে তিনি হয়তো এখন সহজেই আঘাত পেতে পারেন আর সাধারণত তিনি যেভাবে আচরণ করে থাকেন, এখন সেভাবে করছেন না। ধৈর্য ধরুন। শুনুন—এমনকী যদিও এর অর্থ বার বার একই বিষয় শোনা। (১ রাজাবলি ১৯:৯, ১০, ১৩, ১৪) তিনি যা ভোগ করছেন, তিনি হয়তো আপনাকে তা বলার প্রয়োজন অনুভব করতে পারেন।

সহানুভূতিশীল হোন ও বিবেচনা দেখান

বাইবেলের নীতিগুলো:

“যাহারা আনন্দ করে, তাহাদের সহিত আনন্দ কর; যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর।”রোমীয় ১২:১৫.

“সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।”মথি ৭:১২.

◼ নিজেকে আপনার বন্ধুর স্থানে রাখুন। তিনি যদি অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, কোনো চিকিৎসা করাচ্ছেন কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাহলে তিনি হয়তো উদ্‌বেগের মধ্যে থাকতে পারেন ও আবেগপ্রবণ হতে পারেন। এই বিষয়টা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন এবং তার হঠাৎ করে মেজাজ পালটানোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিন। এটা হয়তো অত্যধিক প্রশ্ন, বিশেষ করে ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করার সময় নয়।

“রোগীরা যখন তাদের অসুস্থতার বিষয়ে কথা বলতে চায়, তখন তাদেরকে তা বলতে দিন আর তা তাদের নিজেদের গতিতে,” একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানা ক্যাট্যালিফজ বলেন। “তারা যখন গল্পগুজব করতে চায়, তখন তারা হয়তো পছন্দ করে এমন কোনো বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। কিন্তু তাদের যখন কথা বলার ইচ্ছে থাকে না, তখন আপনি হয়তো শুধু চুপচাপ বসে থাকতে পারেন আর বন্ধুত্বপূর্ণভাবে হাত দুটো ধরে থাকাই বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। অথবা আপনি হয়তো দেখবেন যে, তাদের সবচেয়ে যা দরকার তা হল কেউ যেন তাদের কান্নার সহভাগী হন।”

আপনার বন্ধুর গোপনীয়তাকে সম্মান করুন। লেখিকা রোসান কেলিক, যার দুবার ক্যান্সার হয়েছিল ও যিনি দুবারই তা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তিনি লেখেন: “রোগীর কাছ থেকে ইঙ্গিতগুলো পাওয়ার সময়, ধরে নিন যে, আপনাকে যা বলা হয়েছে তা গোপন বিষয়। আপনাকে যদি পরিবারের মুখপাত্র হতে বলা না হয়ে থাকে, তাহলে তথ্য প্রকাশ করবেন না। রোগীকে জিজ্ঞেস করুন যে, তিনি কী জানাতে চান।” সুনীল যার ক্যান্সার হয়েছিল ও যিনি তা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তিনি বলেন: “একজন বন্ধু এই খবর ছড়িয়ে দিয়েছিল যে, আমার ক্যান্সার হয়েছে আর আমি বেশি দিন বাঁচব না। মনে রাখুন যে, আমার সবেমাত্র অপারেশন হয়েছিল। আমি জানতাম যে, আমার ক্যান্সার হয়েছে কিন্তু আমি বায়প্সির ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তা ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু যে-খবর ছড়িয়ে পড়েছিল তা ইতিমধ্যেই ক্ষতি করেছিল। অন্যদের কাছ থেকে অবিবেচনাপূর্ণ মন্তব্য ও প্রশ্নগুলোর কারণে আমার স্ত্রী খুবই ভেঙে পড়েছিল।”

কোন চিকিৎসা বেছে নেবেন সেই বিষয়ে আপনার বন্ধু যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাহলে সঙ্গেসঙ্গে বলে বসবেন না যে, আপনি তার জায়গায় হলে কী করতেন। লেখিকা লোরি হোপ, যার ক্যান্সার হয়েছিল ও যিনি তা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তিনি বলেন: “ক্যান্সারের কোনো রোগীকে বা ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেয়েছেন এমন কাউকে সেই সম্বন্ধীয় কোনো প্রবন্ধ বা তথ্য পাঠানোর আগে এটা জিজ্ঞেস করা সর্বোত্তম যে, তারা সেই ধরনের তথ্যগুলো পেতে চান কি না। তা না হলে, সদুদ্দেশ্যে দেওয়া আপনার সাহায্যের প্রস্তাব আপনার বন্ধুকে আঘাত দিতে পারে আর আপনি হয়তো সেই সম্বন্ধে কখনোই জানবেন না।” সকলেই যে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সম্বন্ধে অনেক তথ্য লাভ করতে চাইবে, তা নয়।

এমনকী আপনি একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও, সাক্ষাৎ করার সময় দীর্ঘ সময় থাকবেন না। আপনার উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আপনার বন্ধু হয়তো আপনার সঙ্গে মেলামেশা করতে চান না। তিনি হয়তো ক্লান্ত এবং দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার বা এমনকী শোনার জন্য তার হয়তো সামান্যই শক্তি রয়েছে। অন্যদিকে, এমন ধারণা দেওয়া এড়িয়ে চলুন যে, আপনি চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। আপনার বন্ধুর এটা জানার অধিকার রয়েছে যে, আপনি তার জন্য কতখানি চিন্তা করেন।

বিবেচনা দেখানোর সঙ্গে ভারসাম্য ও উত্তম বিচারবুদ্ধি অনুশীলন করা জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, একজন অসুস্থ বন্ধুর জন্য খাবার প্রস্তুত করার বা এমনকী ফুল নিয়ে আসার আগে, আপনি হয়তো জেনে নিতে পারেন যে, তার কোনো এলার্জি রয়েছে কি না। সম্ভবত সর্দির কারণে আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে আপনার বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগে, আপনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা প্রেমের কাজ হবে।

গঠনমূলক হোন

বাইবেলের নীতিগুলো:

“জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।”হিতোপদেশ ১২:১৮.

“তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক।”কলসীয় ৪:৬.

◼ আপনি যদি একজন অসুস্থ বন্ধুর বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন, তাহলে খুব সম্ভবত আপনার কথাবার্তা ও কাজ তা প্রকাশ করবে। একেবারে প্রথমে আপনার বন্ধু যে-ধরনের ব্যক্তি ছিলেন এবং তার যে-গুণগুলো আপনাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল, এখনও তাকে সেইভাবেই চিন্তা করুন। তার সম্বন্ধেই কথা বলুন, তার রোগ সম্বন্ধে নয়। একজন অসহায় ব্যক্তির সঙ্গে যেভাবে কথা বলবেন, সেইভাবে আপনি যদি আপনার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে তিনি হয়তো নিজেকে সেইভাবেই দেখতে শুরু করতে পারেন। মিতালী, যার বিরল এক বংশগত হাড়ের রোগ রয়েছে তিনি বলেন: “একজন সাধারণ ব্যক্তির মতোই আমার সঙ্গে ব্যবহার করুন। আমি অক্ষম কিন্তু আমার নিজস্ব মতামত ও বিভিন্ন ইচ্ছা রয়েছে। আমাকে এক করুণার পাত্র হিসেবে দেখবেন না। আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলবেন না যেন আমি বোকা।”

মনে রাখবেন যে, আপনি যা বলেন শুধু সেটাই নয় কিন্তু আপনি যেভাবে তা বলেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এমনকী আপনার গলার স্বরও প্রভাব ফেলতে পারে। ক্যান্সার ধরা পড়ার ঠিক পরেই অমিত বিদেশে থাকা একজন বন্ধুর কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন, যিনি বলেছিলেন: “আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে, তোমার ক্যান্সার হয়েছে!” অমিত স্মরণ করে বলেন: “আমার বন্ধু যে-সুরে “তোমার” এবং “ক্যান্সার” শব্দগুলোকে উচ্চারণ করেছিল, তাতে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম আর এমনকী কিছুটা ভয় পেয়েও গিয়েছিলাম।”

লেখিকা লোরি হোপ আরেকটা উদাহরণ দেন: “‘আপনি কেমন আছেন?’ জিজ্ঞেস করা একজন রোগীর কাছে অনেক কিছু বোঝাতে পারে। প্রশ্নকারীর গলার স্বর, দেহভঙ্গি, রোগীর সঙ্গে সম্পর্ক, কতখানি ঘনিষ্ঠ আর অবশ্যই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মুহূর্তের ওপর ভিত্তি করে তা রোগীর জন্য সান্ত্বনা নিয়ে আসতে পারে, রোগীকে যন্ত্রণা দিতে কিংবা তার চেপে রাখা ভয়কে জাগিয়ে তুলতে পারে।”

খুব সম্ভবত একজন অসুস্থ বন্ধু চাইবেন যেন তার যত্ন নেওয়া হয়, তাকে বোঝা হয় ও তাকে সম্মান করা হয়। তাই সেই ব্যক্তিকে এই আশ্বাস দিন যে, তিনি আপনার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাকে আপনি সাহায্য করবেন। সোমা, যার ব্রেন টিউমার হয়েছে, তিনি বলেন: “যে-বিষয়টা আমাকে সত্যিই উৎসাহিত করেছিল তা ছিল আমার বন্ধুদের এটা বলতে শোনা যে, তারা আমাকে ভালোবাসে আর যাই হোক না কেন আমি তাদের ওপর নির্ভর করতে পারি।”—হিতোপদেশ ১৫:২৩; ২৫:১১.

সাহায্যকারী হোন

বাইবেলের নীতিগুলো:

“আইস, আমরা বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে প্রেম করি।”১ যোহন ৩:১৮.

◼ আপনার বন্ধু যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসা শুরু করবেন, তখন প্রয়োজনগুলোও পরিবর্তিত হবে। কিন্তু এই সময়গুলোতে তার হয়তো সাহায্যের প্রয়োজন। “তোমার যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, আমাকে বলো,” এইরকম সাধারণ প্রস্তাব দেওয়ার পরিবর্তে, নির্দিষ্ট করে কিছু বলার চেষ্টা করুন। খাবার প্রস্তুত করা, ঘর পরিষ্কার করা, জামাকাপড় কাচা, ইস্ত্রি করা, বাইরের টুকিটাকি কাজ করা, কেনাকাটা করা এবং আপনার বন্ধুকে চিকিৎসার জন্য গাড়িতে করে ডাক্তারখানায় বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার মতো দৈনন্দিন কাজকর্মে সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া হল কয়েকটা ব্যবহারিক উপায় যেগুলোর দ্বারা আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনি তার জন্য চিন্তা করেন। নির্ভরশীল ও সময়ানুবর্তী হোন। আপনার কথা রাখুন।—মথি ৫:৩৭.

“রোগীর অসুস্থতা ও স্বাস্থ্যের জগতের মধ্যবর্তী ফাঁককে পূরণ করার জন্য আমরা বড়ো বা ছোটো যা-ই করি না কেন, তা সাহায্যকারী হবে,” লেখিকা রোসান কেলিক বলেন। দীপিকা, যার দুবার ক্যান্সার হয়েছিল ও যিনি দুবারই তা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তিনিও এই বিষয়ে একমত। “এক একজন বন্ধু আমাকে প্রতিদিন গাড়িতে করে রেডিয়েশনের জন্য অন্য একটা শহরে নিয়ে যেত আর তা খুবই আরামদায়ক ও সান্ত্বনাজনক ছিল! যাওয়ার পথে, আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতাম আর চিকিৎসার পরে, আমরা সবসময় একটা কফির দোকানে থামতাম। এতে আমি আবারও স্বাভাবিক বোধ করতাম।”

কিন্তু এটা ধরে নেবেন না যে, আপনি আপনার বন্ধুর প্রয়োজনগুলো সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানেন। “বার বার জিজ্ঞেস করুন,” কেলিক পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন: “সাহায্য করতে গিয়ে সমস্তকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন না। সেটার ফল উলটো হতে পারে। আপনি যদি আমাকে কিছু করতে না দেন, তাহলে তা হয়তো এই ইঙ্গিত দেবে যে, আমি কিছুই করতে পারি না। আমি যোগ্য বলে অনুভব করতে চাই। আমি অনুভব করতে চাই যে, আমি অসহায় নই। আমি যা করতে পারি তা করতে আমাকে সাহায্য করুন।”

খুব সম্ভবত আপনার বন্ধুর যোগ্য বলে অনুভব করা প্রয়োজন। অলোক, যার এইডস হয়েছে তিনি বলেন: “আপনি যখন অসুস্থ থাকেন, তখন আপনি পরিত্যক্ত হতে চান না, যেন আপনি নিষ্কর্মা বা একেবারে অযোগ্য। আপনি কিছুটা সাহায্যকারী হতে চান, এমনকী যদিও সেটার অর্থ সামান্য কাজ করা। এমনটা অনুভব করা খুব ভালো যে, আপনি এখনও কিছু করতে সমর্থ! এটা আপনাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়। আমি চাই লোকেরা যেন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে দেয় আর এরপর আমার সিদ্ধান্তগুলোকে সম্মান করে। অসুস্থ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, একজন বাবা, মা অথবা অন্য কিছু হিসেবে আমরা আমাদের ভূমিকাকে পালন করতে পারব না।”

আপনার অসুস্থ বন্ধুর পাশে থাকুন

বাইবেলের নীতিগুলো:

“বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।”হিতোপদেশ ১৭:১৭.

◼ দূরত্ব অথবা অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে আপনি যদি আপনার বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারেন, তাহলে বন্ধুত্বপূর্ণ গল্পগুজব করার জন্য আপনি তাকে ফোন করতে, চিঠি লিখতে অথবা ই-মেল পাঠাতে পারেন। আপনি কী সম্বন্ধে লিখতে পারেন? অ্যালেন ডি. উলফেল্ট নামে একজন মনোবিজ্ঞানী পরামর্শ দেন: “আগে করেছেন এমন কয়েকটা মজার বিষয় স্মরণ করান যেগুলোতে আপনি অংশ নিতেন। প্রতিশ্রুতি দিন যে, আপনি . . . শীঘ্র আবারও লিখবেন আর তারপর সেই প্রতিশ্রুতি রাখুন।”

আপনি ভুল কিছু বলে বা করে ফেলতে পারেন এই ভয়ে একজন অসুস্থ বন্ধুকে উৎসাহ দেওয়া থেকে আপনার বিরত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক ক্ষেত্রে, আপনার উপস্থিতিই হল আসল বিষয়। তার বইতে লোরি হোপ লেখেন: “আমরা সকলেই এমন কিছু বলে বা করে থাকি, যেটাকে ভুল বোঝা হতে পারে বা যেটা নিজেদের অজান্তে কাউকে কোনোভাবে আঘাত দিতে পারে। সেটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যাটা তখনই দেখা দিতে পারে যখন আপনি ভুল করার বিষয়ে এতটাই ভয় পান যে, আপনি এমন কারো থেকে দূরে থাকেন যার আপনাকে প্রয়োজন।”

গুরুতরভাবে অসুস্থ একজন বন্ধুর হয়তো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আপনাকে এখন আরও বেশি প্রয়োজন। একজন “বন্ধু” বলে প্রমাণিত হোন। সাহায্য করার জন্য আপনার প্রচেষ্টা হয়তো তার যন্ত্রণাকে দূর করবে না কিন্তু আপনি যাকে ভালোবাসেন তার পক্ষে কোনো কঠিন পরিস্থিতিকে আরও সহনীয় করে তুলতে আপনি সম্ভবপর করতে পারেন। (w১০-E ০৭/০১)

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।