সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সমস্ত দুঃখকষ্টের শেষ সন্নিকট!

সমস্ত দুঃখকষ্টের শেষ সন্নিকট!

সমস্ত দুঃখকষ্টের শেষ সন্নিকট!

দুঃখকষ্টবিহীন এক জগতে থাকার বিষয়ে কল্পনা করুন, যেখানে অপরাধ, যুদ্ধ, অসুস্থতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর থাকবে না। কল্পনা করুন, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আপনাকে আর বৈষম্য, নিপীড়ন কিংবা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সম্বন্ধে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এই সমস্ত কি আপনার কাছে অবাস্তব বলে মনে হয়? এটা ঠিক যে, কোনো মানুষ অথবা মানুষের সংগঠন এই ধরনের অবস্থা নিয়ে আসতে পারবে না। কিন্তু, ঈশ্বর আগের প্রবন্ধে আলোচিত বিষয়গুলো-সহ, মানুষের দুঃখকষ্টের সমস্ত কারণ দূর করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের এই প্রতিজ্ঞাগুলো লক্ষ করুন:

উত্তম সরকারের শাসন

“স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪.

ঈশ্বরের রাজ্য হল এক স্বর্গীয় সরকার। সমস্ত মানবসরকারকে সরিয়ে দিয়ে এটার মনোনীত শাসক যিশু খ্রিস্ট শাসন করবেন এবং তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করবেন, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনই পৃথিবীতে পূর্ণ হয়। (মথি ৬:৯, ১০) এই সরকার কোনো মানবসরকারের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না, কারণ এটা হল ‘আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনন্ত রাজ্য।’ তাই এটা নিশ্চিত যে, চিরস্থায়ী শান্তি আসবে।—২ পিতর ১:১১.

কোনো মিথ্যা ধর্ম থাকবে না

“শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে। সুতরাং তাহার পরিচারকেরাও যে ধার্ম্মিকতার পরিচারকদের বেশ ধারণ করে, ইহা মহৎ বিষয় নয়; তাহাদের পরিণাম তাহাদের ক্রিয়ানুসারে হইবে।”—২ করিন্থীয় ১১:১৪, ১৫.

মিথ্যা ধর্ম যে আসলে দিয়াবলেরই কার্য তা প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং সেটাকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। ধর্মের নামে সমস্ত ভেদাভেদ ও রক্তপাত দূর হয়ে যাবে। এর ফলে “জীবন্ত সত্য ঈশ্বরের” সমস্ত প্রেমিক তাঁকে ‘এক বিশ্বাসে’ এবং “আত্মায় ও সত্যে” উপাসনা করতে পারবে। সেইসময় কতই-না শান্তি ও একতা থাকবে!—১ থিষলনীকীয় ১:৯; ইফিষীয় ৪:৫; যোহন ৪:২৩.

মানব অসিদ্ধতা আর থাকবে না

“ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

যিহোবা তাঁর পুত্র যিশুর মাধ্যমে এটা সম্ভবপর করবেন, যিনি মানবজাতির জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। (যোহন ৩:১৬) যিশুর পরিচালনাধীনে মানবজাতিকে সিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে। আর কোনো দুঃখকষ্ট থাকবে না কারণ “ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন” ও “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল” মুছে দেবেন। মানব অসিদ্ধতা ও দুঃখকষ্ট শীঘ্রই অতীতের বিষয় হবে; “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৯.

মন্দ আত্মারা আর থাকবে না

“তিনি [যিশু খ্রিস্ট] সেই নাগকে ধরিলেন; এ সেই পুরাতন সর্প, এ দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ]; তিনি তাহাকে সহস্র বৎসর বদ্ধ রাখিলেন, আর তাহাকে অগাধলোকের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া সেই স্থানের মুখ বদ্ধ করিয়া মুদ্রাঙ্কিত করিলেন; যেন . . . সে জাতিবৃন্দকে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে।” —প্রকাশিত বাক্য ২০:২, ৩.

শয়তান ও মন্দদূতেদের যখন বদ্ধ করে “অগাধলোকে,” অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হবে, তখন শয়তানের সমস্ত প্রভাব দূর হয়ে যাবে। তারা মানুষের কাজকর্মের ওপর আর মন্দ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। শয়তান ও মন্দ আত্মাদের প্রভাব থেকে মুক্ত এক জগতে বাস করা কতই-না স্বস্তি নিয়ে আসবে!

‘শেষ কাল’ সমাপ্ত হবে

যিশু যেটাকে “মহাক্লেশ” বলে উল্লেখ করেছিলেন, সেই সময়ে ‘শেষ কাল’ অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছাবে। তিনি বলেছিলেন: “তৎকালে এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না’।”—মথি ২৪:২১.

এই ক্লেশ এই অর্থে মহা বা তীব্র হবে যে, সেইসময় নজিরবিহীন বিপর্যয়গুলো ঘটবে। এগুলো ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধে’ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে, যা “হর্‌মাগিদোন” নামে পরিচিত।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬.

সমস্ত জায়গার লোকেরা, যারা যা সঠিক তা ভালোবাসে, তারা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে তাদের জন্য যে-আশীর্বাদগুলো অপেক্ষা করে রয়েছে, সেগুলোর কয়েকটা বিবেচনা করুন।

ঈশ্বর আরও বেশি কিছু করবেন!

“বিস্তর লোক” এক শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে প্রবেশ করবে: ঈশ্বরের বাক্য বলে যে, অগণিত “বিস্তর লোক” ‘মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিবে’ এবং এক ধার্মিক নতুন জগতে জীবিত অবস্থায় প্রবেশ করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০, ১৪; ২ পিতর ৩:১৩) তারা তাদের পরিত্রাণের জন্য “ঈশ্বরের মেষশাবক” যিশু খ্রিস্টের কাছে ঋণী থাকবে, “যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।”—যোহন ১:২৯.

ঐশিক শিক্ষা অনেক উপকার নিয়ে আসবে: নতুন জগতে “পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) ঐশিক শিক্ষার মধ্যে থাকবে, সকলের সঙ্গে শান্তিতে থাকার এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”—যিশাইয় ৪৮:১৭.

মৃত প্রিয়জনদের কবর থেকে ওঠানো হবে: যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি তাঁর বন্ধু লাসারকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (যোহন ১১:১, ৫, ৩৮-৪৪) এভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের রাজ্যের ব্যবস্থার অধীনে তিনি আরও বিশাল আকারে তা করবেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

চিরকাল শান্তি ও ধার্মিকতা বিরাজ করবে: খ্রিস্টের শাসনাধীনে অরাজকতা আর থাকবে না। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ যিশু হৃদয় পড়তে পারেন আর তিনি তাঁর এই ক্ষমতাকে ধার্মিক ও দুষ্টদের বিচার করার জন্য ব্যবহার করবেন। যারা তাদের মন্দ পথ ত্যাগ করতে প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে ঈশ্বরের নতুন জগতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।—গীতসংহিতা ৩৭:৯, ১০; যিশাইয় ১১:৩, ৪; ৬৫:২০; মথি ৯:৪.

আমরা বাইবেলের অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণীর মধ্যে মাত্র কয়েকটা আলোচনা করেছি, যেগুলো আসন্ন অপূর্ব সময় সম্বন্ধে বলে। ঈশ্বরের রাজ্য যখন পৃথিবীর ওপর শাসন করবে, তখন চিরকাল ‘শান্তির বাহুল্য’ থাকবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯) দুঃখকষ্টের সমস্ত কারণ যা মানবজাতিকে জর্জরিত করেছে, তা দূর করা হবে। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, কারণ ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন: “দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি। . . . এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৫. ▪ (w১৩-E ০৯/০১)

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]