সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পারিবারিক বৃত্তে স্নেহ দেখান

পারিবারিক বৃত্তে স্নেহ দেখান

পারিবারিক বৃত্তে স্নেহ দেখান

 “পারলে পুড়িয়ে ফেল! একেবারে পুড়িয়ে ফেল!” তরু তার স্ত্রী ইয়োকোকে ধমক দেন। * “আমি অবশ্যই তা করব,” তার স্ত্রী পালটা জবাব দেন এবং তাদের দুজনের একসঙ্গে তোলা ছবিটা পোড়ানোর জন্য একটা দেশলাই কাঠি জ্বালান। এরপর ইয়োকো চিৎকার করে বলেন, “আমি পুরো বাড়িটাই পুড়িয়ে ফেলব!” তরু তার স্ত্রীর গালে চড় মারেন আর এইভাবে দৌরাত্ম্যের মাধ্যমে তাদের কথাকাটাকাটির অবসান ঘটান।

তিন বছর আগে, তরু ও ইয়োকো এক সুখী বিবাহিত দম্পতি হিসেবে তাদের জীবন শুরু করেছিল। তা হলে ভুলটা কোথায় হয়েছিল? যদিও তরু আপাতদৃষ্টিতে একজন ভাল লোক ছিলেন কিন্তু তার স্ত্রী মনে করতেন যে, তার প্রতি তরুর কোন স্নেহই নেই এবং তার অনুভূতিগুলোর প্রতি বলতে গেলে খেয়ালই রাখতেন না। তার স্ত্রীর দেখানো স্নেহের প্রতি সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে তাকে অযোগ্য বলেই মনে হতো। এটা সহ্য করতে না পেরে, ইয়োকো ক্রমশই ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হয়ে উঠেছিলেন। এর ফলে তিনি ঘুমোতে পারতেন না, উৎকণ্ঠায় ভুগতেন, খাওয়াদাওয়ার প্রতি কোন স্পৃহা ছিল না, কথায় কথায় বিরক্ত হয়ে উঠতেন এবং নিরাশায় ভুগতেন, এমনকি এক এক সময় তিনি ভয়ও পেতেন। তার ঘরের মধ্যে এইধরনের উদ্বেগপূর্ণ পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও, তরু এই বিষয়ে মাথা ঘামাতেন না। এই সমস্ত কিছুই তার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল।

“বিষম সময়”

এইধরনের সমস্যাগুলো আজকের দিনে একটা সাধারণ বিষয়। প্রেরিত পৌল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আমাদের দিনের লোকেদের একটা বৈশিষ্ট্য থাকবে যে তারা “স্নেহরহিত” হবে। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এখানে যে-মূল গ্রিক শব্দটাকে “স্নেহরহিত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে-স্বাভাবিক স্নেহ থাকে সেটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দিনে এইধরনের স্নেহের নিশ্চয়ই একটা ঘাটতি রয়েছে। এমনকি যদিও বা স্নেহ থেকেও থাকে তবুও, পরিবারের সদস্যরা একে অপরের প্রতি খুব কমই তা প্রকাশ করে।

আজ অনেক বাবামা জানে না যে, কীভাবে নিজেদের সন্তানদের প্রতি প্রেম ও স্নেহ প্রকাশ করতে হয়। কেউ কেউ এমন এক পারিবারিক পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছে, যেখানে স্নেহের অভাব রয়েছে আর তারা হয়তো এটা উপলব্ধি করতে পারে না যে জীবন অনেক বেশি আনন্দময় ও সুখদায়ক হয়ে উঠতে পারে যদি সেখানে স্নেহ অনুভব ও প্রকাশ করা হয়। আর তরুর ক্ষেত্রে মনে হয় এটাই ঘটেছিল। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন তার বাবা সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকতেন আর রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরতেন। খুব কমই তিনি তরুর সঙ্গে কথা বলতেন আর যখন বলতেন তিনি শুধু গালিগালাজই করতেন। তরুর মাও পূর্ণ-সময়ের চাকরি করতেন এবং তরুর সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারতেন না। টেলিভিশনের সামনেই তরু তার সময় কাটাতেন। পরিবারের মধ্যে না কেউ কাউকে প্রশংসা করত আর না ছিল কোন ভাববিনিময়।

সংস্কৃতিও একটা বিষয় হতে পারে। ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি স্থানে, স্ত্রীর প্রতি স্নেহ প্রকাশ করার জন্য একজন ব্যক্তিকে সাধারণ রীতিনীতিকে লঙ্ঘন করতে হয়। প্রাচ্যের এবং আফ্রিকার অনেক দেশে, কথা বা কাজের মাধ্যমে স্নেহ প্রকাশ করা হল পরম্পরাগত রীতির বিরুদ্ধ। স্বামীদের পক্ষে তাদের স্ত্রী বা সন্তানদের “আমি তোমাকে ভালবাসি” কথাটা বলা হয়তো অস্বস্তিকর হতে পারে। তা সত্ত্বেও, অতীতের পারিবারিক সম্পর্ক থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, যা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়েও দীর্ঘ দিন ধরে টিকে ছিল।

আদর্শ পারিবারিক সম্পর্ক

যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর একজাত পুত্রের নিবিড় সম্পর্কের মধ্যেই পরিবারের জন্য সবচাইতে উত্তম আদর্শ পাওয়া যায়। তাঁরা পরস্পরের প্রতি নিখুঁতভাবে প্রেম প্রদর্শন করেন। অগণিত বছর ধরে, এই আত্মিক ব্যক্তি যিনি পরে যীশু খ্রীষ্ট হয়েছিলেন, তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে এক মনোরম সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন। তাঁদের এই বন্ধনকে তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি দিন দিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম।” (হিতোপদেশ ৮:৩০) পুত্র তাঁর পিতার প্রেম সম্বন্ধে এতই নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি অন্যদের কাছে ঘোষণা করতে পেরেছিলেন যে যিহোবার কাছে তিনি দিনের পর দিন বিশেষভাবে প্রিয় ছিলেন। তিনি সবসময় তাঁর পিতার সঙ্গে থেকে খুশি ছিলেন।

এমনকি মানুষ হিসেবে যীশু পৃথিবীতে থাকার সময়ও, ঈশ্বরের পুত্রকে তাঁর পিতার গভীর ভালবাসার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর, যীশু তাঁর পিতার কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন: “‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’” (মথি ৩:১৭) পৃথিবীতে যীশুর কাজ শুরু করার প্রারম্ভেই কতই না এক উৎসাহজনক প্রেমের আশ্বাস তিনি পেয়েছিলেন! তাঁর পিতার অনুমোদন শোনা মাত্র তাঁর স্বর্গীয় জীবনের সমস্ত স্মৃতি ফিরে পাওয়া নিশ্চয়ই তাঁর হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।

এভাবে যিহোবা তাঁর সর্বজনীন পরিবারের প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রেম প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সবচাইতে উত্তম উদাহরণ রেখেছেন। আমরা যদি যীশু খ্রীষ্টকে গ্রহণ করি, তা হলে আমরাও যিহোবার স্নেহকে উপভোগ করতে পারব। (যোহন ১৬:২৭) যদিও আমরা স্বর্গ থেকে কোন বাক্য শুনতে পাব না কিন্তু আমরা প্রকৃতির মধ্যে, যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থার মধ্যে এবং অন্যান্য উপায়ে যিহোবার প্রেমের প্রকাশ দেখতে পাব। (১ যোহন ৪:৯, ১০) যিহোবা এমনকি আমাদের প্রার্থনাও শোনেন এবং আমাদের যাতে মঙ্গল হয় সেই অনুসারে তার উত্তর দেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮; যিশাইয় ৪৮:১৭) যিহোবার সঙ্গে যতই আমরা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলি, তাঁর প্রেমপূর্ণ যত্নের প্রতি আমাদের উপলব্ধি ততই বাড়িয়ে তুলি।

যীশু তাঁর পিতার কাছ থেকে শিখেছিলেন যে কীভাবে অপরের প্রতি সমবেদনা, সহানুভুতি, দয়া এবং গভীর আগ্রহ দেখাতে হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “[পিতা] যাহা যাহা করেন, পুত্ত্রও সেই সকল তদ্রূপ করেন। কারণ পিতা পুত্ত্রকে ভালবাসেন, এবং আপনি যাহা যাহা করেন, সকলই তাঁহাকে দেখান।” (যোহন ৫:১৯, ২০) পৃথিবীতে থাকার সময় যীশু যে-উদাহরণ রেখে গেছেন তা বিবেচনা করার দ্বারা আমরাও স্নেহ প্রকাশ করার কৌশলতা শিখতে পারি।—ফিলিপীয় ১:৮.

পরিবারের মধ্যে স্নেহকীভাবে?

যেহেতু “ঈশ্বর প্রেম” আর আমরা ‘তাঁহার প্রতিমূর্ত্তিতে’ সৃষ্টি হয়েছি, তাই আমাদের মধ্যে প্রেমের অনুভূতি বোধ ও তা প্রকাশ করার ক্ষমতা দুটোই রয়েছে। (১ যোহন ৪৮; আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) তবুও, এটা সহজে প্রকাশ করা যায় না। স্নেহ প্রকাশ করার জন্য প্রথমে আমাদের অবশ্যই নিজেদের বিবাহ সঙ্গী ও সন্তানদের প্রতি স্নেহের অনুভূতি থাকতে হবে। মনোযোগী হোন এবং তাদের মনোরম গুণগুলো লক্ষ করুন, যদিও এগুলোকে প্রথমে সামান্য বলে মনে হয় সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। আপনি হয়তো বলবেন যে ‘আমার স্বামীর [স্ত্রীর বা সন্তানের] মধ্যে আকর্ষণীয় কিছুই নেই।’ যাদের জন্য বাবামারা বিবাহ সঙ্গী বেছে দেয় তারা হয়তো তাদের সঙ্গীদের প্রতি খুব কমই স্নেহ অনুভব করে। অনেক দম্পতি হয়তো সন্তান চায় না। তবুও, চিন্তা করে দেখুন যে সা.কা.পূ. দশম শতাব্দীতে যিহোবা তাঁর রূপক স্ত্রী অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতির জন্য কীরকম অনুভব করেছিলেন। যদিও তাঁর ভাববাদী ইলীশায় এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, ইস্রায়েলের দশ বংশের মধ্যে আর একজনও যিহোবার উপাসক নেই তবুও, যিহোবা সূক্ষ্মভাবে তাদের পরীক্ষা করেছিলেন এবং সব মিলিয়ে ৭০০০ জনকে খুঁজে পেয়েছিলেন যাদের মধ্যে তাঁকে খুশি করার মতো গুণগুলো ছিল। আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তম গুণগুলো খুঁজে দেখার ক্ষেত্রে আপনি কি যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারেন?—১ রাজাবলি ১৯:১৪-১৮.

পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যাতে আপনার স্নেহ অনুভব করতে পারে তার জন্য আপনাকে তা প্রকাশ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। যখনই আপনি প্রশংসনীয় কিছু দেখতে পান, তখনই তা কথার দ্বারা প্রকাশ করুন। গুণবতী স্ত্রীর সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে গিয়ে, ঈশ্বরের বাক্য তার পরিবারের এক আগ্রহজনক বৈশিষ্ট্যের বিষয় উল্লেখ করে: “তাঁহার সন্তানগণ উঠিয়া তাঁহাকে ধন্য বলে; তাঁহার স্বামীও বলেন, আর তাঁহার এইরূপ প্রশংসা করেন।” (হিতোপদেশ ৩১:২৮) লক্ষ করুন কত স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি তাদের উপলব্ধি প্রকাশ করেছিল। কথার দ্বারা স্ত্রীর প্রশংসা করে একজন পিতা তার পুত্রের জন্য উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন ও তাকে উৎসাহ দেন যে সে যখন বিয়ে করবে তখন সেও যেন তার স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশংসা করে।

এ ছাড়া, বাবামাদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রশংসা করা। এটা সন্তানদের হৃদয়ে আত্মসম্মান বোধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কীকরে একজন ‘নিজের প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে’ যদি সে নিজেকেই সম্মান করতে না পারে? (মথি ২২:৩৯) অন্যদিকে, যদি বাবামারা সন্তানদের একেবারেই প্রশংসা না করে সবসময় তাদের সমালোচনা করে, তা হলে সন্তানরা তাদের আত্মসম্মান বোধকে খুব সহজেই হারিয়ে ফেলবে এবং অপরের প্রতি স্নেহ প্রকাশ করতে হয়তো অসুবিধা বোধ করবে।—ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.

আপনি সাহায্য পেতে পারেন

আপনি যদি প্রেমপূর্ণ এমন এক পরিবারে বড় হয়ে না ওঠেন, তা হলে কী? তবুও, আপনি স্নেহ প্রকাশ করতে শিখতে পারেন। প্রথম ধাপটা হল, সমস্যাটা বোঝা এবং উন্নতি করার যে প্রয়োজন আছে তা উপলব্ধি করা। ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল এক্ষেত্রে খুব সাহায্যকারী। এটাকে একটা আয়নার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যখন আমরা আয়নারূপ বাইবেলের শিক্ষাগুলোর ভিত্তিতে নিজেদের পরীক্ষা করি, তখন আমাদের চিন্তাধারার মধ্যে যে-ঘাটতি অথবা খুঁতগুলো রয়েছে, সেগুলো আমাদের সামনে প্রতিফলিত হয়। (যাকোব ১:২৩) বাইবেলের শিক্ষাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আমরা যেকোন অনুপযুক্ত প্রবণতাকে রদবদল করতে পারি। (ইফিষীয় ৪:২০-২৪; ফিলিপীয় ৪:৮, ৯) এটা আমাদের নিয়মিতভাবে করা উচিত, যেন কখনও “সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই।”—গালাতীয় ৬:৯.

কেউ কেউ হয়তো যে-পরিবেশে বড় হয়েছে সেটার জন্য বা সংস্কৃতির কারণে স্নেহ প্রকাশ করাকে কঠিন বলে মনে করতে পারে। কিন্তু, সাম্প্রতিক একটা গবেষণা দেখায় যে এইধরনের বাধাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ড্যানিয়েল গোলম্যান ব্যাখ্যা করেন যে ‘এমনকি শিশু অবস্থায় একেবারে হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া কিছু অভ্যাসকে বদলানো সম্ভব।’ ১৯ শতাব্দীরও বেশি আগে বাইবেল ইঙ্গিত করেছিল যে, ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে এমনকি হৃদয়ের সবচাইতে গভীরে গেঁথে যাওয়া প্রবণতাগুলোকেও পরিবর্তন করা সম্ভব। এটি আমাদের পরামর্শ দেয়: ‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ কর এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর।’—কলসীয় ৩:৯, ১০.

সমস্যাটাকে শনাক্ত করার পর, পরিবার তাদের প্রয়োজনের বিষয়টা মাথায় রেখে বাইবেল অধ্যয়ন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ‘স্নেহ’ শব্দটা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে তা দেখুন না কেন? আপনি হয়তো এইধরনের একটা শাস্ত্রপদ খুঁজে পাবেন: “তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পরিণামও দেখিয়াছ, ফলতঃ প্রভু [“যিহোবা,” NW] স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ৫:১১) এরপর বাইবেলে ইয়োবের বিবরণটি পড়ুন এবং দেখুন যে ইয়োবের প্রতি যিহোবা কেমন স্নেহপূর্ণ ও দয়াবান ছিলেন। নিঃসন্দেহে, আপনি আপনার পরিবারের প্রতি স্নেহপূর্ণ ও দয়াবান হওয়ার ক্ষেত্রে যিহোবাকে অনুকরণ করতে চাইবেন।

কিন্তু, অসিদ্ধতার কারণে আমাদের জিহ্বার ব্যবহারের ক্ষেত্রে “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই।” (যাকোব ৩:২) পরিবারের মধ্যে আমরা হয়তো উৎসাহজনক উপায়ে আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হতে পারি। এখানেই আমাদের প্রয়োজন প্রার্থনা করা ও যিহোবার ওপর নির্ভরতা রাখা। হাল ছেড়ে দেবেন না। ‘অবিরত প্রার্থনা করুন।’ (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭) যিহোবা তাদের সাহায্য করবেন যারা পরিবারের মধ্যে স্নেহ খোঁজেন ও সেইসঙ্গে যারা তা দেখাতে চায় কিন্তু ইতস্তত বোধ করে।

এ ছাড়া, যিহোবা সদয়ভাবে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন। যাকোব লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ কি [আধ্যাত্মিকভাবে] রোগগ্রস্ত? সে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন।” (যাকোব ৫:১৪) হ্যাঁ, যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোর প্রাচীনরা সেইসব পরিবারের জন্য খুবই সাহায্যকারী হতে পারে, যাদের সদস্যরা একে অপরের প্রতি স্নেহ প্রকাশ করতে কষ্ট বোধ করে। যদিও তারা মনোরোগ চিকিৎসক নয় কিন্তু প্রাচীনরা ধৈর্যের সঙ্গে তাদের সহ বিশ্বাসীদের সাহায্য করতে পারে, এই কথা বলে নয় যে, তাদের কী করা উচিত কিন্তু তাদের যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি মনে করিয়ে দিয়ে এবং তাদের সঙ্গে ও তাদের হয়ে প্রার্থনা করে।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; গালাতীয় ৬:১.

তরু ও ইয়োকোর ক্ষেত্রে খ্রীষ্টান প্রাচীনরা সবসময় তাদের সমস্যাগুলো শুনেছিল এবং তাদের সান্ত্বনা দিয়েছিল। (১ পিতর ৫:২, ৩) মাঝে মাঝে, একজন প্রাচীন ও তার স্ত্রী তাদের কাছে আসতেন, যাতে ইয়োকো একজন অভিজ্ঞ খ্রীষ্টীয় নারীর সাহচর্যের দ্বারা উপকৃত হন, যিনি ইয়োকোকে “পতিপ্রিয়া” হওয়ার সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন। (তীত ২:৩, ৪) সহ খ্রীষ্টানদের দুঃখকষ্ট ও ব্যথার প্রতি উপলব্ধি ও সহানুভূতি দেখানোর দ্বারা প্রাচীনরা “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল” হয়ে ওঠে।—যিশাইয় ৩২:১, ২.

সহানুভূতিশীল প্রাচীনদের সাহায্যে তরু বুঝতে পেরেছিলেন যে, অনুভূতি প্রকাশ করার ব্যাপারে তার সমস্যা ছিল এবং এই “শেষ কালে” পরিবার ব্যবস্থাকে শয়তান আক্রমণ করে। (২ তীমথিয় ৩:১) তরু তার সমস্যার মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে যেহেতু বড় হওয়ার সময় তিনি কখনও ভালবাসা পাননি, তাই তিনি ভালবাসা দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। গম্ভীরভাবে বাইবেল অধ্যয়ন ও প্রার্থনার দ্বারা তরু ইয়োকোর আবেগত চাহিদাগুলোর প্রতি আরও বেশি করে সাড়া দেন।

যদিও তরুর প্রতি ইয়োকো রাগান্বিত ছিলেন কিন্তু যখন তিনি তার পরিবারের পটভূমিটা বুঝতে পেরেছিলেন এবং নিজের দোষগুলোও দেখতে পেরেছিলেন, তখন তিনি তার স্বামীর উত্তম গুণগুলো দেখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। (মথি ৭:১-৩; রোমীয় ৫:১২; কলসীয় ৩:১২-১৪) তিনি যেন তার স্বামীকে ভালবেসে যেতে পারেন সেইজন্য তিনি আন্তরিকভাবে যিহোবার কাছে শক্তি চান। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) অবশেষে তরু ধীরে ধীরে তার স্ত্রীর প্রতি স্নেহ দেখাতে শুরু করেন, যা তার স্ত্রীকে আনন্দিত করে।

হ্যাঁ, এমনকি আপনিও যদি পরিবারের মধ্যে স্নেহ অনুভব করতে ও প্রকাশ করতে অসুবিধা বোধ করেন, তা হলে এই সমস্যাকে অবশ্যই অতিক্রম করতে পারবেন। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের গঠনমূলক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। (গীতসংহিতা ১৯:৭) বিষয়ের গুরুত্বকে স্বীকার করার দ্বারা, আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তম গুণগুলো দেখতে চেষ্টা করার দ্বারা, ঈশ্বরের বাক্য পড়া ও প্রয়োগ করার দ্বারা, আন্তরিক প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার ওপর আস্থা রাখার দ্বারা এবং অভিজ্ঞ খ্রীষ্টান প্রাচীনদের সাহায্য নেওয়ার দ্বারা আপনি আপনার ও আপনার পরিবারের মধ্যে যে-এই দুর্দান্ত বাধা রয়েছে, সেটাকে অতিক্রম করতে পারবেন। (১ পিতর ৫:৭) যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্বামীর মতো আপনিও আনন্দ করতে পারবেন। তার স্ত্রীর প্রতি স্নেহ প্রকাশ করতে তাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সাহস করে তিনি যখন বলতে পেরেছিলেন যে “আমি তোমাকে ভালবাসি,” তখন তার স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। আনন্দাশ্রু ফেলে তার স্ত্রী বলেছিলেন: “আমিও তোমাকে ভালবাসি কিন্তু ২৫ বছরে এই প্রথমবার তুমি আমাকে এই কথাটা বলেছ।” আপনার সঙ্গী ও সন্তানদের প্রতি আপনার স্নেহ প্রকাশ করার জন্য এত সময় ধরে অপেক্ষা করবেন না!

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে সাহায্য জুগিয়ে থাকেন